আজ রবিবার, ৯ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৪শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

সোনারগাঁয়ে নৌকা তৈরিতে ব্যস্ত জেলেরা

বিশেষ প্রতিবেদক:

বর্ষার আগমনে মেঘনা, মারীখালী ও বহ্ম্রপুত্র নদীর পানি ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাওয়ায় নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে নৌকা তৈরিতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন স্থানীয় জেলেরা ও সূতার পাড়ার লোকজন। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও বর্ষা মৌসুমে নতুন ঘর তৈরি ও পুরাতন ঘর মেরামত, বিভিন্ন আসবাব পত্র তৈরি করা ছেড়ে দিয়ে নৌকা তৈরিতে মহাব্যস্ত হয়ে পড়েছেন তিন শতাধিক সূতার ও জেলে পরিবার।

মেঘনা নদী তীরবর্তী সোনারগাঁ উপজেলার পাঁচানী এলাকার একজন জেলে বর্ষা মৌসুমে নদীতে মাছ শিকারের জন্য রোড চাম্পুল কাঠ দিয়ে ১২ হাত লম্বা একটি নতুন নৌকা তৈরি করছেন প্রায় ১০ হাজার টাকা খরচ করে। হযরত আলী নামে একজন সূতার মিস্ত্রিকে ২৫০০ শত টাকা চুক্তিতে নৌকাটি তৈরি করার কাজ দেন। চুক্তি ভিত্তিক সূতার মিস্ত্রিরি দুই দিন সময়ে নৌকা তৈরির কাজ শেষ করেছেন। সূতার মিস্ত্রি হযরত আলী জানান, প্রায় ৪৫ বছর ধরে তিনি এ পেশায় জড়িত। বংশানুক্রমে যুগ যুগ ধরে চলে আসা বিভিন্ন ধরনের নৌকা তৈরি করা এ পেশার সঙ্গে জড়িত মিস্ত্রি সূতারোদের কাছে একটি অন্যতম ঐতিহ্য। নদীমাতৃক বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের প্রায় পুরোটাই নদী দিয়ে ঘেরা।

মেঘনা অববাহিকায় প্রবাহিত নদীর পলি বিধৌত সোনারগাঁ এলাকা মূলত একটি দ্বীপের ন্যায়।
এখানকার মাটি যেমন উর্বর, তেমনি নদ-নদী গুলোতে রকমারি মাছের মহাসমারোহ। মেঘনা, শীতলক্ষা, বহ্ম্রপুত্র ঘেরা চারদিকে নদী বেষ্টিত হওয়ায় এখানে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করা জেলে সম্প্রদায়ের সংখ্যাই বেশি। এ কারণে বর্ষা মৌসুমে জেলেদের প্রধান বাহন নৌকা তৈরিতে ধুম পড়ে যায়। সোনারগাঁয়ের বিভিন্ন বাজারে রাস্তার পাশে নৌকা তৈরির মিস্ত্রিদের বানানো সারি সারি সাজিয়ে রাখা নৌকা দেখলে মনে হয় নৌকার হাট বসেছে। উপজেলার কাইকারটেক, আনন্দবাজার, শান্তির বাজার গোলাকান্দা হাটে প্রতি সপ্তাহে নৌকা বেচাকেনা হয়। উপজেলার নদ-নদীর চরাঞ্চল এলাকা জুড়ে গড়ে উঠেছে এই নৌকার সাম্রাজ্য। সোনারগাঁ উপজেলার বিভিন্ন বাজারের নৌকা তৈরির কারিগররা জানান, বিভিন্ন এলাকা থেকে ক্রেতারা নৌকার হাটে এসে নৌকা কিনে নিয়ে যায়। এক সময় তারা এসব নৌকা তৈরি করতে সুন্দরী কাঠ ব্যবহার করত। কিন্তু বর্তমানে তারা রেনডি কড়ই, সিল কড়ই, রোড চামুল, মেহগনি, আম, আমড়াসহ বিভিন্ন ধরনের কাঠ দিয়ে নৌকা তৈরি করেন। প্রকার ভেদে প্রতিটি নৌকা ৭০০০ থেকে ১০০০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। তবে এ উপজেলার চরাঞ্চলের ব্যবসায়ীরা যেহেতু নৌকায় করে খাল অথবা নদীতে ব্যবসা-বাণিজ্য ও যাতায়াত করে, সেহেতু এখানে নৌকার চাহিদা বেশি। এখানে ভাল মানের কাঠের ১৮ হাত লম্বা একটি নৌকা তৈরিতে ৩/৪ জন মিস্ত্রি প্রয়োজন, এর দাম হয় ১৬ থেকে ১৮ হাজার টাকা, এই মিস্ত্রিদের দৈনিক হাজিরা ৭০০ থেকে ৯০০ টাকা। আর ছোট একটি নৌকা তৈরি করতে দু’জন মিস্ত্রির সময় লাগে এক দিন এবং এটি বিক্রি করে লাভ হয় ১০০০ হাজার থেকে ১৫০০ টাকা পর্যন্ত।

স্থানীয় কয়েকজন নৌকা তৈরির সূতার জানান, যদি কোনো নৌকায় গাব, আলকাতরা ও আলপনার কারুকাজ থাকে সে নৌকার মূল্য অনেক বেড়ে যায়। নৌকা বিক্রির সময় সঙ্গে বৈঠা দেয়া হয় না। এটি আলাদা কিনতে হয়। এর মূল্য আবার ২০০ থেকে ৩০০ টাকা। নৌকা তৈরির কাজে জড়িত সূতার শ্রী দুলাল চন্দ্র, গুরুপদ, সামির চন্দ্র ও রতন চন্দ্র নামে অনেক বেপারী এসব নৌকার কেনাবেচার সঙ্গে জড়িত। বর্তমানে কাঠ সঙ্কট, অন্যান্য কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধি ও গ্রামাঞ্চলে নৌকার ব্যবহার কমে যাওয়ায় ভালো ব্যবসা করতে পারছেন না নৌকা তৈরির কারিগররা।